চীনের হুবেই প্রদেশের
উহান শহর থেকে প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সময়টা বলা হচ্ছিল
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে। কিন্তু এখন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলছেন,
অক্টোবরের প্রথম দিক থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে থাকতে পারে। সারা বিশ্ব
থেকে সংগ্রহ করা ভাইরাসটির সাত হাজার জিনোম সিকোয়েন্সের ক্রম বিশ্লেষণ করে
এমন তথ্যই পেয়েছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের ওই গবেষণার সংক্ষিপ্ত নিবন্ধন গত মঙ্গলবার
প্রকাশিত হয়েছে। প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ইনফেকশন, জেনেটিকস অ্যান্ড
ইভালুয়েশন-এর আগামী সংস্করণে গবেষণার পুরো নিবন্ধন প্রকাশিত হবে। ওই
নিবন্ধনমতে, করোনার জীবাণু যেটি সার্স-কোভ-২ নামে পরিচিত, সেটি সম্ভবত গত
বছরের ৬ অক্টোবর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো সময়ে প্রাথমিক বাহক থেকে
মানুষের শরীরে চলে আসে।
করোনার সাত হাজার জিনোম সিকোয়েন্সের ক্রম বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই পেয়েছেন গবেষকেরা।
চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
নতুন ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে চীনের বিজ্ঞানীরা গত ৯ জানুয়ারি জানান,
এটি সার্স করোনাভাইরাসের গোত্রের। এর দুই দিনের মাথায়, ১১ জানুয়ারি
সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখে বিশ্ব।
কিন্তু
করোনা সংক্রমণ আরও অনেক আগেই শুরু হয় বলে অনেক বিজ্ঞানীদের মনে সন্দেহ
ছিল। অনেক দেশ তো এই সংক্রমণের তথ্য লুকানোর অভিযোগ এনেছে চীনের বিরুদ্ধে।
সেই বিতর্কের মধ্যে প্রথম সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার নতুন সময়কালের কথা জানালেন
বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং ইউনিভার্সিটি অব
রিইউনিয়ন আইসল্যান্ডের গবেষকেরা ভাইরাসটির বিবর্তন ও ভাইরাসের জিনগত
পরিবর্তন পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। এ জন্য তাঁরা গত জানুয়ারি থেকে সারা
বিশ্ব থেকে ভাইরাসটির ৭ হাজারের বেশি জিনোম সিকোয়েন্স ক্রম সংগ্রহ করেন। গত
মাসে গবেষণাটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হন তাঁরা। জিনোম সিকোয়েন্স ক্রম ও
করোনার বিবর্তন বিশ্লেষণ ও পরীক্ষার পরই প্রাদুর্ভাব শুরুর সম্ভাব্য সময়
চিহ্নিত করতে সক্ষম হন গবেষকেরা। মানুষের শরীরে প্রবেশের পর করোনাভাইরাসের
প্রধান প্রধান জিনগত পরিবর্তনও শনাক্ত করতে সক্ষম হন গবেষকেরা।
অবশ্য অতীতের সব গবেষণায় প্রথম সংক্রমণের ভিন্ন ভিন্ন তারিখ
এসেছে। তবে চীনের সরকারি নথির তথ্যে গত ১৭ নভেম্বর প্রথম সংক্রমণের বিষয়টি
নিশ্চিত হয় সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। করোনাভাইরাসের প্রথম পুরো জিনোম
সিকোয়েন্সের তথ্য গত জানুয়ারিতে প্রকাশ করে চীনের সাংহাইয়ের একটি
গবেষণাগার। পরে ভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণের আরও তথ্য প্রকাশিত হয়। ওই সময়
বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, সার্স-কোভ-২ বাদুড় থেকে আসতে পারে এবং নভেম্বরের কোনো
একসময় বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণী হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে
জীবাণুটি।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন ও বিবর্তনের পর্যায় নিয়ে গবেষণার পর প্রথম সংক্রমণের নতুন সময়কাল পেলেন।
Post a Comment